নরসিংদীর শিবপুরে ট্রাক এবং মাইক্রোবাসের মুখোমুখি সংঘর্ষে ৭ জনের নিহত হয়েছেন। এসময় আরও ৪ জন গুরুতর আহত হন।
জানা গেছে, শুক্রবার অফিস বন্ধ থাকায় গতকাল বৃহস্পতিবার ঢাকার সাভারের আশুলিয়ার এসবি নিটিং নামের একটি পোশাক কারখানার কয়েকজন কর্মী ডিউটি শেষে মাইক্রোবাসে করে ঘুরার উদ্দেশ্যে রওনা হয় সিলেটে। পথে বেপরোয়া গতির পাথর বোঝাই ট্রাকের চাপায় তাদের যাত্রা পথেই শেষ হয়ে যায়।
গতকাল বৃহস্পতিবার (২৫ আগস্ট) দিবাগত রাত ৩টার দিকে নরসিংদীর শিবপুর উপজেলার ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের ঘাসিরদিয়া এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। সিলেট থেকে আশা পাথর বোঝাই ট্রাকটি অন্য আরেকটি গাড়িকে ওভারটেক করতে গেলে মাইক্রোবাসটির সঙ্গে মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এতে দুমড়েমুচড়ে যাওয়া মাইক্রোবাসটির চালকসহ মোট ৭ জন নিহত হয়। এ সময় গুরুতর আহত হয় আরও ৪ জন। জানা গেছে, ওই প্রতিষ্ঠানে চাকরির সুবাদে তারা সবাই একসঙ্গেই চলাফেরা করতেন।
এদিকে দুর্ঘটনার খবর পেয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন হাইওয়ে গাজীপুর রিজিওনের পুলিশ সুপার মুস্তাফিজুর রহমান।
নিহত সাতজন হলেন- গাজীপুরের কালিয়াকৈর থানার লতিফপুর গ্রামের আইয়ুব খানের ছেলে আল আমীন (২৭), টাঙ্গাইলের দেলদুয়ার উপজেলার মীর কুমুল্লী গ্রামের মোতাহের হোসেনের ছেলে মীর নাজমুল হক ওরফে সবুজ (৩০), মাদারীপুরের কালকিনি থানার উত্তর কৃষ্ণনগর গ্রামের তোফায়েল হাওলাদারের ছেলে আব্দুল আউয়াল (৩৭), ঝালকাঠির রাজাপুর থানার পারগোপারপুর গ্রামের আবদুল গনি হাওলাদারের ছেলে আল আমীন হাওলাদার (২৯), জামালপুরের সরিষাবাড়ী থানার ধারাবর্ষা গ্রামের দুদু মিয়ার ছেলে রাজু আহাম্মেদ (৩৬), বরিশালের মুলাদি থানার মুলাদি গ্রামের মো. মজিবর সিকদারের ছেলে রায়হান সিকদার ওরফে আরিয়ান (২৪) ও কুষ্টিয়ার সদর থানার খাজানগর গ্রামের নুরু মোল্লার ছেলে বাবুল মোল্লা (৪০)।
এ ছাড়া আহত চারজনের মধ্যে তিনজনের নাম জানা গেছে। তারা হলেন সাকি, পারভেজ ও দোয়েল। দুর্ঘটনার পর থেকে মাইক্রোবাস চালকের খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না।
সকালে দুর্ঘটনার খবর পেয়ে নরসিংদী সদর হাসপাতালের মর্গে ছুটে আসেন এসবি নিটিং কারখানার ব্যবস্থাপক (প্রশাসন) মো. শিহাব উদ্দীন। তিনি সাংবাদিকদের জানান, চালক ও আরেকজন ছাড়া মাইক্রোবাসটিতে অবস্থান করা নয়জনই তাদের প্রতিষ্ঠানের কর্মী। তাদের মধ্যে আটজনই প্রতিষ্ঠানের মার্চেন্ডাইজার ও একজন ফেব্রিকস সেকশনের স্টোরকিপার। কিছুদিন ধরেই তারা সিলেটে ঘুরতে যাওয়ার পরিকল্পনা করছিলেন। সে অনুযায়ী গতকাল রাত ১১টার দিকে আশুলিয়া থেকে চালকসহ ১১ থেকে ১২ জন ওই মাইক্রোবাসে চড়ে সিলেটের দিকে রওনা হন। পরে গাড়িটি নরসিংদীর শিবপুরে পৌঁছালে এই দুর্ঘটনা ঘটে।
হাইওয়ে পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিস বলছে, গতকাল দিবাগত রাত তিনটার কাছাকাছি সময়ে এই দুর্ঘটনা ঘটে। সিলেট থেকে ছেড়ে আসা পাথরবোঝাই একটি ট্রাক ঢাকার দিকে যাচ্ছিল। অন্যদিকে মাইক্রোবাসটি সিলেটের দিকে যাচ্ছিল। পথে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের শিবপুর ঘাসিরদিয়া এলাকায় অন্য একটি গাড়িকে দ্রুতগতিতে ওভারটেক করতে গিয়ে ট্রাকটি নিয়ন্ত্রণ হারায়। এ সময় সামনে চলে আসা মাইক্রোবাসের সঙ্গে ট্রাকটির মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এতে ঘটনাস্থলেই মাইক্রোবাসের পাঁচ যাত্রী নিহত হন। পরে হাইওয়ে পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা ঘটনাস্থলে গিয়ে নিহত ৫ জনের মরদেহ উদ্ধারসহ আহত আরও ৬ জনকে উদ্ধার করে ১০০ শয্যাবিশিষ্ট নরসিংদী জেলা হাসপাতালে পাঠান । হাসপাতালটিতে নেওয়ার পর জরুরি বিভাগের চিকিৎসক আরও ২ জনকে মৃত ঘোষণা করেন। আহত ৪ জনকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ঢাকায় পাঠানো হয়েছে।
১০০ শয্যাবিশিষ্ট নরসিংদী জেলা হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক এ এন এম মিজানুর রহমান জানান, সড়ক দুর্ঘটনায় হতাহত ছয়জনকে রাতে হাসপাতালে আনা হয়েছিল। তাদের মধ্যে দুজনকে মৃত অবস্থায় হাসপাতালে আনা হয়। অন্য চারজনকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। আহত ব্যক্তিদের মধ্যে একজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।
ইটাখোলা হাইওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির ভারপ্রাপ্ত ইনচার্জ কবির হোসেন ভূঁইয়া বলেন, পুলিশ সুপার মহোদয়সহ আমরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। দুর্ঘটনায় দুমড়েমুচড়ে যাওয়া মাইক্রোবাস ও পাথরবোঝাই ট্রাক জব্দ করে পুলিশ ফাঁড়িতে নিয়ে আসা হয়েছে। ট্রাকটির চালকও আটক আছেন। নানা মাধ্যমে হতাহত ব্যক্তিদের স্বজনদের কাছে খবর পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে। এই ঘটনায় আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।
টিএইচ